বিজন বাজিকর
সময় বুঝি দরবেশের ছদ্মবেশে বিজন বাজিকর
আস্তিনের কোটর থেকে উড়িয়ে দেয় কবুতরের জোড়া
পানের খিলি রেকাবে রেখে সেই যে গেলে, নিয়তিহীন ঝড়
হৃদয়জুড়ে পেরেক ঠোকে। পড়শিহীন এ-আমি মুখপোড়া
কালের ফেরে নীলাভ এক-মহিষে চেপে বেড়াই ঘুরে। আরো
যেখানে যাই, রঙের মেলা ফুরিয়ে যায় বেলার আবডালে
তোমার চারু চিবুক চুয়ে লাবণ্যরা পূর্বসূরি গাঢ়
জাহাজে ছোটে দ্বীপান্তরে। হিরণ্ময়ী, বৃষ্টি-ঝাঁপতালে
চুড়ির ধ্বনি রেলগাড়ির বাঁশিতে আঁকো। লক্ষ্-কোটি রাত
ধনুকচ্যুত তীরের স্নেহে বিদ্ধ করে আমার কণ্ঠকে
স্বভাবী ছেড়ে, মহামারীর আবেশ দূরে হারাক নির্ঘাৎ
ধূসর চাবিওলার মতো গোধূলি এল চোখের কোনো শোকে।
টিকেট কেটে পকেটে রাখি নির্বাসনে। কোথায় জাদুঘর?
অসময়ের তীর্থে কেন তোমাকে খুঁজি?– জানি না উত্তর!
জলজ জন্ম
জলজ জন্মের প্রতিবেশীরা ডুবসাঁতারে বহুদূরে
ঝিনুক কুড়ানোর সফল উছিলায় হারিয়ে গেছে। আজো
বকেয়া বাতাসের চপল ত্রিসীমানা আমাকে ঘুরেঘুরে
যত্নে রাখে খুব। সিঁদুরে সন্ধ্যায় এখনো বুঝি সাজো
নিতল লাল টিপে? রজনীগন্ধার জোছনা-দাবানলে
রূপসী লাবণ্যে বৃষ্টি পুড়েছিল। বাস্তু সাপদের
বন্ধ্যা প্রশ্বাসে জড়িয়ে যায় রাত। বকেয়া কৌশলে
পাচার হয়ে যাক ব্যথার বেহিসাবি অগ্নিকুণ্ডের
বেহায়া বেশভূষা। হারাক ডানা মেলে সুড়ঙ্গের দেশে!
আমি কি প্রকৃষ্ট দাহ্য বস্তুর উদাহরণ! তাই
দহন করো ওই তোমার দৃষ্টিতে আমাকে ভালবেসে
দেখেছি দেহলিতে– অথই উড়ছিল হাততালির ছাই।
আমির খসরুর গীতল কোনো তোতা আমারো ছিল নাকি?
থাকো তো কাছে। ক্ষণে কোথাও চলে যাও। কেন যে হোলে পাখি!
দেবী
সদ্য বাসি কোনো ইটের ভাঁটা থেকে মুষড়ে-পড়া দিন
দেহের রেখা ম্যালে শকুন-দ্যোতনাতে। শীত কি ধাতুময়
ঘ্রাণের কর্কশ বাতাসে নতজানু? তোমার প্রতি লীন
আমার সবটুকু মুগ্ধ শৈশব জানে নি সংশয়।
হঠাৎ বৃষ্টিতে উপাসনালয়ের আলুলায়িত টান
ভালোলাগার দেবী রাখুক সঞ্চয়ে। মনখারাপি হোলে
নিরালা-বিষণ্ণ একটি লাবণ্য তোমাতে আনচান!
জলের নগ্নতা রোদের লোবানে কি পড়েছে আজো ঢ’লে?
ময়ূরপঙ্খির সাবেক প্রস্থানে কে গড়ে সৈকত
পরাঙ্মুখতার ইন্দ্রজাল শুধু কয়েদখানা বোঝে?
আলোকবর্ষের মোহন মুহূর্ত সাজালে ছায়াপথ
দৃশ্যহীন হয় আঁশটে যবনিকা। চাঁদটা মুখ গোঁজে
রাতের ছলনাতে। অন্য জন্মেও তোমাকে খুঁজি কত!
জাতিস্মর আমি হতে তো পারতাম? – বুঝি নি অন্তত।
বন্ধু
নদীও কাঁদে। কেন যে বলো, ‘গুণিন হলে বন্ধু হতে নেই!’
ইলিশ কবে জোছনা-জলে গিয়েছে ফেলে বেদনা-ধোয়া ঘ্রাণ
নিশিতে-পাওয়া সপ্ত-ঋষি ও-পাড়ে লীন। সেই