অনিরুদ্ধ আলম-এর একগুচ্ছ সনেট

অনিরুদ্ধ আলম
অনিরুদ্ধ আলম 437 Views

বিজন বাজিকর

সময় বুঝি দরবেশের ছদ্মবেশে বিজন বাজিকর
আস্তিনের কোটর থেকে উড়িয়ে দেয় কবুতরের জোড়া
পানের খিলি রেকাবে রেখে সেই যে গেলে, নিয়তিহীন ঝড়
হৃদয়জুড়ে পেরেক ঠোকে। পড়শিহীন এ-আমি মুখপোড়া

কালের ফেরে নীলাভ এক-মহিষে চেপে বেড়াই ঘুরে। আরো
যেখানে যাই, রঙের মেলা ফুরিয়ে যায় বেলার আবডালে
তোমার চারু চিবুক চুয়ে লাবণ্যরা পূর্বসূরি গাঢ়
জাহাজে ছোটে দ্বীপান্তরে। হিরণ্ময়ী, বৃষ্টি-ঝাঁপতালে

চুড়ির ধ্বনি রেলগাড়ির বাঁশিতে আঁকো। লক্ষ্-কোটি রাত
ধনুকচ্যুত তীরের স্নেহে বিদ্ধ করে আমার কণ্ঠকে
স্বভাবী ছেড়ে, মহামারীর আবেশ দূরে হারাক নির্ঘাৎ
ধূসর চাবিওলার মতো গোধূলি এল চোখের কোনো শোকে।

টিকেট কেটে পকেটে রাখি নির্বাসনে। কোথায় জাদুঘর?
অসময়ের তীর্থে কেন তোমাকে খুঁজি?– জানি না উত্তর!


জলজ জন্ম

জলজ জন্মের প্রতিবেশীরা ডুবসাঁতারে বহুদূরে
ঝিনুক কুড়ানোর সফল উছিলায় হারিয়ে গেছে। আজো
বকেয়া বাতাসের চপল ত্রিসীমানা আমাকে ঘুরেঘুরে
যত্নে রাখে খুব। সিঁদুরে সন্ধ্যায় এখনো বুঝি সাজো

নিতল লাল টিপে? রজনীগন্ধার জোছনা-দাবানলে
রূপসী লাবণ্যে বৃষ্টি পুড়েছিল। বাস্তু সাপদের
বন্ধ্যা প্রশ্বাসে জড়িয়ে যায় রাত। বকেয়া কৌশলে
পাচার হয়ে যাক ব্যথার বেহিসাবি অগ্নিকুণ্ডের

বেহায়া বেশভূষা। হারাক ডানা মেলে সুড়ঙ্গের দেশে!
আমি কি প্রকৃষ্ট দাহ্য বস্তুর উদাহরণ! তাই
দহন করো ওই তোমার দৃষ্টিতে আমাকে ভালবেসে
দেখেছি দেহলিতে– অথই উড়ছিল হাততালির ছাই।

আমির খসরুর গীতল কোনো তোতা আমারো ছিল নাকি?
থাকো তো কাছে। ক্ষণে কোথাও চলে যাও। কেন যে হোলে পাখি!


দেবী

সদ্য বাসি কোনো ইটের ভাঁটা থেকে মুষড়ে-পড়া দিন
দেহের রেখা ম্যালে শকুন-দ্যোতনাতে। শীত কি ধাতুময়
ঘ্রাণের কর্কশ বাতাসে নতজানু? তোমার প্রতি লীন
আমার সবটুকু মুগ্ধ শৈশব জানে নি সংশয়।

হঠাৎ বৃষ্টিতে উপাসনালয়ের আলুলায়িত টান
ভালোলাগার দেবী রাখুক সঞ্চয়ে। মনখারাপি হোলে
নিরালা-বিষণ্ণ একটি লাবণ্য তোমাতে আনচান!
জলের নগ্নতা রোদের লোবানে কি পড়েছে আজো ঢ’লে?

ময়ূরপঙ্খির সাবেক প্রস্থানে কে গড়ে সৈকত
পরাঙ্মুখতার ইন্দ্রজাল শুধু কয়েদখানা বোঝে?
আলোকবর্ষের মোহন মুহূর্ত সাজালে ছায়াপথ
দৃশ্যহীন হয় আঁশটে যবনিকা। চাঁদটা মুখ গোঁজে

রাতের ছলনাতে। অন্য জন্মেও তোমাকে খুঁজি কত!
জাতিস্মর আমি হতে তো পারতাম? – বুঝি নি অন্তত।


বন্ধু

নদীও কাঁদে। কেন যে বলো, ‘গুণিন হলে বন্ধু হতে নেই!’
ইলিশ কবে জোছনা-জলে গিয়েছে ফেলে বেদনা-ধোয়া ঘ্রাণ
নিশিতে-পাওয়া সপ্ত-ঋষি ও-পাড়ে লীন। সেই

Share This Article
অনিরুদ্ধ আলম (Anirudha Alam) পেশাগত জীবনে একজন ফ্রিল্যান্স উন্নয়নকর্মসূচি কন্সালটেন্ট এবং উন্নয়ন-য যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি এ পর্যন্ত পঞ্চাশটিরও অধিক বই লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: সোনালি নৈঃশব্দ্যে হরিণাবলি (কবিতা), প্রেম কি কেবলি পাখি প্রবণ (কবিতা), ভালবাসা প্রিয়তমাসু (কবিতা), অনেকটা পথ হাঁটতে হবে ঘুমিয়ে পড়ার আগে (কিশোর কবিতা), ২৪ অক্টোবর ১৯৭১ (উপন্যাসিকা), এইসব রাতদিন (কিশোর কবিতা), দূরের ডাক (ছড়া-কবিতা), তারপর তারপর (ছড়া), সকলের জন্যে পরিবেশ পরিবেশের জন্যে সকলে (ছড়ানাটিকা), পিঁপড়ে (সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস), অপারেশন ক্যালপি বত্রিশ (সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস), এবং ক্রিনোর অপেক্ষায় (সায়েন্স ফিকশন), তেইশশত দুই সালেরএক জানুয়ারি (ছোট গল্প), দু’ শ’ বছরের সেরা বাংলা কিশোর গল্প (সম্পাদিত গল্পের সংকলন), তোমাদের জন্যে বাংলা বানান (শিশুকিশোরদের জন্যে বাংলা বানান সংক্রান্ত বই), আমাদের কালো মানিক: মানিক বন্দোপাধ্যায় (জীবনী)।