ভালোবাসার সবুজ দেবদারু এবং মাহমুদ সাজ্জাদ

মিহির হারুন
মিহির হারুন 344 Views

মাহমুদ সাজ্জাদ একজন নাট্যব্যক্তিত্ব। তার জন্ম ১৯৪৯ সালে ১ জানুয়ারি। পিতা আবদুল ওয়াদুদ, মাতা রাবেয়া খাতুন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। দ্বিতীয় ভাই ম. হামিদ, বাংলাদেশের একজন বরেণ্য ব্যক্তি। তৃতীয় ভাই শহিদুল ইসলাম একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। চতুর্থ ভাই মেজর (অব:) ওয়াহিদ। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট ভাই বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। ছোট দুই বোন রোজ ও বিথি।

ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষেই ময়মনসিংহের গলগন্ডা কাজীবাড়ি তার পৈতৃক নিবাস। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ালেও মূলত তিনি বড় হয়েছেন মুক্তাগাছা এবং ময়মনসিংহের আলো বাতাসে। তার মায়ের বাড়ি মুক্তাগাছা থাকায় তিনি এসএসসি পাস করেন মুক্তাগাছা শহরের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ রামকিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (পরে আর কে মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে।

এইচএসসি পাস করেন ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে। ময়মনসিংহ পড়াশোনার সময় তিনি অভিনয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তিনি নাট্যচক্র নামে একটি থিয়েটার  গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা শুরু করেন। এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখন তার শিল্প মাধ্যমে বিশাল প্রসার ঘটতে আরম্ভ করে।

আবৃত্তি, মঞ্চনাটক, টিভি ও সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ জুড়ে তিনি সমাদৃত হতে থাকেন। বাংলাদেশের চলচিত্র জগতে প্রবাদপুরুষ প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, গল্পকার, জহির রায়হানের “সংসার” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে মাহমুদ সাজ্জাদ চলচিত্র জগতে প্রবেশ করেন। পরে তিনি আরেকজন কালজয়ী খ্যাতিমান চলচিত্র পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, শক্তিমান অভিনেতা খান আতাউর রহমানের “ঝড়ের পাখি” সিনেমায় অভিনয় করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তৎকালীন সময়ের সাড়া জাগানো সিরিয়াল “সকাল সন্ধা” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোটপর্দায় অভিনয়ে যাত্রা শুরু করে সারা বাংলাদেশের টিভি দর্শকদের মন জয় করে নেন।

তার বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি বহু মঞ্চে, সিনেমায়, টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি তিনি একজন মিষ্টিভাষী, সদালাপী, এবং একজন সৎ মানুষ ছিলেন। প্রচারের আড়ালে থেকে তিনি বহু সমাজ কল্যাণ মূলক কাজ করতেন। মাহমুদ সাজ্জাদের বেশি প্রিয় ছিল বড়শিতে মাছ ধরা, তার জীবদ্দশায় ফুড়সুৎ পেলেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় তিনি মাছ ধরার জন্য ছুটে বেড়াতেন।

মাহমুদ সাজ্জাদ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন, ভালোবেসেছেন শিল্প-সাহিত্যকে। অবশেষে বৈশ্বয়িক করোনার ঝড়ে উপড়ে গেছে চিরসবুজ ভালোবাসার এই দেবদারু বৃক্ষটি।

বাংলাদেশের লক্ষ্য কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে অবশেষে ২০২১ এর ২৪ অক্টোবর রোজ রবিবার দুপুর সাড়ে তিনটায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্ত্রী মমতাজ বেগম, দুই ছেলে উপল ও অঞ্জন, পরিবারের আপনজন সহ কোটি ভক্তকে রেখে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। তিনি তার সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবেন বহুযুগ পর্যন্ত।

Share This Article
মিহির হারুন একজন নাট্যব্যাক্তিত্ব, একাধারে তিনি শিক্ষক, লেখক, মঞ্চাভিনেতা, এবং একজন বাচিক শিল্পী। পাশাপাশি তিনি “বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজ” এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের বই মেলায় “মেঘের বাড়ি” নামক একক অভিনয় ও কিশোর নাটকের দুটি বই প্রকাশিত হয়। তার প্রতিষ্ঠীত “শিশু থিয়েটার” এর মাধ্যমে শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক ও মানসিক প্রতিভা বিকাশে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।