আরো একজন এসেছিল ফাঁসির দাবি নিয়ে
 যেমন কোন এক মা-
 বুলেটবিদ্ধ খোকার শব দেখে
 কেঁদে উঠেছিল বাংলায়;
 লোহিত রাস্তায় সারি সারি বুটের ছাপ ছাপিয়ে
 মৃত্তিকা বলে উঠেছিলো- এবার বাংলা ছাড়ো
 মিছিলের স্রোত হয়ে গিয়েছিল রক্তপ্রপাত-
 এইতো সেদিন!
কেউ এসেছে মা’কে না জানিয়ে,
 বন্ধুর দেয়া ঝর্ণাকলম বুক পকেটে ঝুলিয়ে
 আবার ফিরব বলে এসেছে নরম ছেলেটি।
 আরেকটি ছেলে যেন ঝড়ের পূর্বাভাস
 মুঠিবদ্ধ হাতে তার বর্ণমালা লিখা।
 কেউ টিউশন ছেড়ে এসেছে,
 কেউ প্রেমিকার হাত ছেড়ে এসেছে-
 কেউবা মিছিল শেষে কিনতে যাবে
 বোনের জন্য টাঙ্গাইল শাড়ি।
 পাগল ছেলেটি নিয়ে এসেছে মা’কে লিখা চিঠি।
একজন কবি, একজন দার্শনিক এবং একজন মোটর মেকানিকও এসেছেন।
 হলের ডাইনিং বয়-হাতে তার এলুমিনিয়ামের থালা
 মিছিলের তালে তালে সে বাজাচ্ছে তার বিদ্রোহের রণগীত।
 একজন ভিক্ষুকও ছিল মিছিলে।
 বিপ্রতীপ হাতে ধরা আদর্শলিপি
 কোমরে শার্ট প্যাঁচানো সেই ছোট্ট শিশুটি এসেছিলো নির্ধন্ধ উচ্চারণেঃ
 “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই“।
সমস্ত আকাশ সেদিন কেঁপে উঠেছিল মিছিলের বজ্রনাদের
 ঝরে পড়ার বদলে গাছের পাতাগুলো সেদিন হয়ে উঠেছিল চির হরিৎ।
তোমাদের জড় বুলেটের তপ্ত সীসা এতোটা শক্তিশালী নয় যে
 ভেদ করে যাবে রক্তক্লেদাক্ত শ্লোগান
 তোমাদের বারুদ এতটা স্রোতজ নয় যে
 সহজেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে গণজোয়ার;
 আমাদের এক একটি বর্ণ পঞ্চান্নহাজার বর্গমাইল বিস্তৃত
 ক’টা বন্দুক আছে তোমাদের যে গুলি করবে?
 আমাদের এক একটি বর্ণের ভেদাঙ্ক কাবুকের চেয়েও তীক্ষ্ণ-
 ক’টা বুক আছে তোমাদের-যা পেতে নেবে?
মিছিলে গুলি করে তোমরা একটাও জীবন থামাতে পারোনি
 কেননা ওরা অমর হয়ে গেছে
 মিছিলে গুলি করে তোমরা একটাও ধ্বনি থামাতে পারোনি
 কেননা ওটা আমাদের ভাষা হয়ে গেছে।
তোমরা মিছিল থামাতে পেরেছ
 ‘বাংলা’ থামাতে পারোনি।







 
 


