চলচিত্রঃ শরৎ ’৭১
পরিচালনাঃ মোরশেদুল ইসলাম
কাহিনি ও চিত্রনাট্যঃ গিয়াসউদ্দিন সেলিম
প্রযোজনাঃ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি
অভিনয়েঃ ওয়াহিলা মল্লিক জল, রহমত আলী, অনামিকা, বন্যা মির্জা,
সময়ঃ ৩০ +- মিনিট


শরৎ ’৭১ গল্পটি দুটি পরিবারের। প্রথম পরিবারের কর্তাকে পাকিস্তানিরা তুলে নিয়ে গেছে কিছুদিন আগে। পরিবারের সদস্যদের ধারণা তিনি আর ফিরে আসবেন না, কিন্তু আবার একইসাথে পরিবারের সবাই আশাও করে হয়ত ফিরে তিনি আসবেন। কিন্তু বাড়ির ছোট ছেলে, যার বয়স ৫-৭, সে চায় কেউ তাকে একটা বন্দুক দিক, সে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করে বাবাকে ফিরিয়ে আনবে। এই ছেলেটার একটা ময়না পাখি আছে। পাখিটাকে সে ‘জয় বাংলা’ বলতে শেখায়।

ছোট্ট সিনেমাটিতে একটা কথা খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। সেটা হল, ঐসময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটা শুধু একটা রাজনৈতিক স্লোগানের সীমাকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিল, সবার প্রাণের চাওয়া। এখানে সেই চাওয়া এতটাই তীব্র, সার্বজনীন আর সর্বব্যাপি যে একটা শিশুর মধ্যেও ঢুকে গেছে, যে শিশুটি এখনও চাওয়া-পাওয়া জিনিসটাই ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেনি।

অন্যদিকে দ্বিতীয় পরিবারের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটার নাম রোমেল সে, অনেক আগেই যুদ্ধে গেছে। ছেলের মা-বাবার দুটি রূপ দেখতে পাই আমরা। একবার তারা বহুদিন ছেলে না দেখা, সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে না জানা, ইত্যাদি দুঃখে আপ্লুত হয়। আবার আরেকবার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করছে সেটা নিয়ে গর্বিত হয়। এই পরিবারের একটা মেয়ে আছে যে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে, মেয়েটার নাম মনে করতে পারছিনা, এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন বন্যা মির্জা। এই মেয়েটার সাথে হালকা প্রেমের সম্পর্ক আছে প্রথম পরিবারের বড় ছেলের।

এদিকে এই বড় ছেলের এক বন্ধু এসেছে। বন্ধুটা মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে খুব আগ্রহী বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েরা। একদিন মা ছেলের বন্ধুর জন্য স্পেশাল রান্না করছিলেন, কিন্তু সকালে গিয়ে দেখলেন, তার ছেলে আর ছেলের বন্ধু গোপনে চলে গেছে যুদ্ধে। মা একবার গর্বিত হন, আরেকবার শেষ দেখাটাও হল না ভেবে আপ্লুত হন।

যুদ্ধে পাওয়া বড় ছেলেটা তার প্রেমিকার জন্য একটা চিঠি রেখে যায়। চিঠিতে প্রেমিকার ভালোবাসা প্রকাশ দেখা যায় প্রেমিকাকে সহযোদ্ধা হবার আহবানের মধ্যে দিয়ে।

এভাবে ছোট ছোট অনেক ঘটনা দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে, স্বাধীনতার আকাংখা আর ত্যাগ কীভাবে সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা যুদ্ধকালীন সাধারণ সমাজ-জীবনের একটা অংশের স্বরূপ দেখতে পাই।

Share This Article
মহিউল ইসলাম মিঠু। জন্ম বগুড়ায়। বাবা জহুরুল হক ‘জাহাঙ্গীর’, মা মাজেদা হক ‘কণা’। বাবা সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। চাকুরীর সুবাদে দুয়েক বছর পর পরই বদলি হতেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। বাবার সাথে মিঠু’র শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুরের বিভাগের বিভিন্ন শহরে। দশটার বেশি স্কুল-কলেজ বদলাতে হয়েছে। বেড়ে উঠেছেন সারা বাংলাদেশ (প্রায়) জুড়ে। বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বগুড়া থেকে এসএসসি, সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। মহিউল ইসলাম মিঠু কৌতুহলী মানুষ। জানতে ভালোবাসেন। এজন্যই সম্ভবত খুব অল্প বয়সেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার অভ্যাসটাই হয়তো ধীরে ধীরে লেখার দিকে ধাবিত করেছিল। বাংলাদেশের প্রথমসারির জাতীয় পত্রিকা, সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের জন্য লিখেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কিশোর-ম্যাগাজিন ‘আজবদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। অনেকগুলো জনপ্রিয় বই অনুবাদ করে বিভিন্ন স্তরের পাঠকের আস্থা অর্জন করেছেন, জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা। তার অনুদিত কিছু বই বিভিন্ন সময় জাতীয় বেস্ট-সেলারের তালিকাগুলোতে ছিল।