বনলতা সেনের বাংলাদেশ
পৌউষের হিম ঝরা রাতে
খেজুর রস টুপটাপ ঝরে ভেসে ওঠে পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখের করাঘাত।
ঘরের বিছানা ছেড়ে
মেয়েটির নাভি নিম্নভূমি যেনো একাত্তরের একটুকরো বাংলাদেশ
পড়ে থাকে ফসলের মাঠে—সরষে ফুলের মিহিসুরে ভোর হয়
নরম আলোয় জেগে ওঠে জনপদ।
কোলাহল বাড়ে
মেয়েটির কাচিলির হুক থেকে উড়ে যায় সংক্ষুব্ধ শিবির।
খোলা ঝিনুকের মতো রক্তাক্ত ঝিনুকের পাশে
পিঁপড়ের সারি লাভার করাত হয়ে
পামপাই নগরী থেকে নেমে আসে সংখ্যাগুরু বীর্যের মউ
লেপ্টে থাকে মাটির ঢেলায়।
নদী
পলাতকা পাখির পালকে
কুয়াশা ভরে নিলে উড়ে যায় দিগন্তের চিল
নিশিস্রোতে ভেসে যায়
দীর্ঘ সব মাতাল দেবদারু।
দূর বনগ্রামে ময়ূরের ডাকে জমা হয় মেঘ
প্রতিটি বৃষ্টির পর পরিত্যক্ত জলে
পিঁপড়ের আশ্রম ভেঙে গাঢ় হয় রাত।
জাহাজ ডুবির পরে জেগে থাকে
শুধু ঝিঁঝিঁর সাম্রাজ্য
জল ডাকা রাতে
সাঁতার জানে না নদী।
প্রহর
বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসে বিলুপ্ত বাতাস,
উড়ছে নতুন মেঘের উৎপাত
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে
চোখের দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত আলোর কারুকাজ।
রাতের আঁধারে মানবের চোখগুলো
কোটর থেকে উড়ে গিয়ে
খেলা করে শূন্য প্রহরে
স্বাপ্নিক বৃক্ষগুলো নদীর সঙ্গে ঘুমতে চাই,
ফুল চাই গন্ধহীন হতে,
নিহতেরা বাঁচতে চাই
কিন্তু পতনে যে মানুষ সুস্থ বোধ করে
সে আর উঠতে চাই।
মধ্য গগনে একঝাঁক মানুষ
উড়ে যায় দূরে
অকারণে।
পরিণতি
একজন রাণী
সিংহাসনে বসে আছেন
একটি ফ্রেমের ভিতর লটকে আছে অগনণ মানুষ আর মানুষ…..
তারা সবাই বধির একং বোবা
তারা সবাই চোয়াল চেপে দাঁড়িয়ে আছে
তাদের পকেটে লোকানো তাজা গ্রেনেট
একটু নড়েচড়ে উঠলেই
গিড়িম শব্দে পতন হবে একটি শাসকের
বাঘের বংশধর
কয়েকটি কালো চতুর বিড়াল
প্রতিদিন রোদের পিয়ালা ভেঙে চূর্ণ হলে
যে রাত্রি ঘনায়
তাতেও জোছনা নেই
চরাচরে দেখি এক অলৌকিক ভয়ের বিশাল থাবা–
পাশবিক ছায়া।
সূর্যকে আঁচড়ায় ক্ষুব্ধ বিড়ালেরা
হরিৎ পোশাক ছুঁয়ে নেমে আসে
হেমন্তের সকাল।