তালিকাবিহীন চৌরাস্তার আশেপাশে পড়ে-থাকা ভাঙা বেহালাতে প্রতিবাদের টঙ্কার বেজে উঠেছে কি ভাষার দাবিতে হারিয়ে-যাওয়া ভাইদের আকাশি ব্যাকুলতা হয়ে?
হিংস্রতার নিরেট আশঙ্কা যশোর রোড ধরে এঁকে দিয়েছিল দুর্বৃত্তায়নের পদচারণা। সময় বুঝি কখনোসখনো কালো বেড়ালের সাজ নিতে পছন্দ করে ডহর রাতের আনকোরা অন্ধকারে?
হাল ভেঙে গেলেও, নদীর দেশের মাঝি জানে কীভাবে নৌকা তাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। আর প্রতিটি মৃদঙ্গ মোরগ ঠিকঠিক ডেকে আনে একেকটি আশালতার দিন।
যে-দেশে সোমেশ্বরীর মতো আথালিপাথালি জোছনা মহুয়া, মলুয়া, কাজলরেখার গল্পে স্নাত, সে-দেশের সোনার ছেলেরা বিপন্ন মায়ের সম্মান রক্ষার্থে অবলীলায় হৃদয়ঙ্গম করে– কী ক’রে দৃঢ় চিত্তে রাইফেল ধরতে হয়; কী ক’রে ছুঁড়তে হয় প্রতিশোধের গ্রেনেড হায়নাদের পদমূল চুরমার করে দিতে।
আজো বাতাসি আকাশে ওড়ে কচি পেঁয়াজপাতার উদ্দীপনাতে-রঙিন পায়রার বর্গীয় পাখসাট।
এন্তার জানিয়ে রাখি, একটি গুলিবিদ্ধ ধানশালিকের বদলা হিসেবে দশটি দানব শত্রুর মৃতদেহ অতিতুচ্ছ! অতিনগন্য! রেসকোর্স ময়দানের প্রতিটি ধূলিকণা বুঝেছিল– অভূতপূর্ব স্বকীয়তায়, কেমন করে আত্মবিশ্বাসকে উচ্চশিরে দাঁড়াতে দিতে হয়।
পাখির চিরায়িত চিৎকারে নদীর ঘুম ভাঙে। রূপালি সারা শরীরে অবারিত পুবালি ঢেউ কোন সে-মায়াময়ী বিছিয়ে দেয়? নায়ের ছোট্ট ছইয়ের ভেতরে পাঁচটি কিশোরের ঊর্ধ্বশ্বাস-প্রতীক্ষা তীক্ষ্ণ তলোয়ারের আবেগে উদ্দীপ্ত করছে হাতে-ধরা স্বর্গীয় আগ্নেয়াস্ত্রগুলোকে। ও-পাড়ে দাঁতাল জিপের আসন্ন হুংকার রোধ করতে গর্জে উঠবে নীরব বন্দুকের মুখরতা।
সরব পেলবতাতে উদ্বুদ্ধ পানপাতার হৃদয়ে প্রকৃতি যতটুকু বিন্দুবিন্দু শুভাকাঙ্ক্ষা জমা রাখে, ততটুকু ভালবাসা দিয়ে নিরালাকে কাছে পেতে চেয়েছিলাম।
অতিক্রান্ত তৃণভূমির সীমান্তে হীরের-টুকরো মৌমাছিদের অভিবাদন ঘনীভূত হলেই, বসন্ত ঝোপঝাড়ের গায়ে ফুলেল গর্জন মেখে দেয় সঘন। যেন বলতে চায়, ‘সাহসী হৃদয়ের কৈশোর আর সহিষ্ণু ভালোলাগার যৌবন কখনো ফুরাতে পারে না। একেকটি প্রার্থনাময় গোধূলি আসে তো আরেকটি সোনালি সকালকে আবাহন করতে।’
পিচ্ছিল আঁধারের সঙ্গে লড়তে-লড়তে, চিরন্তন বনানী ছুঁয়ে সূর্য উঠলেই, অপূর্ব মোহমুগ্ধতা মনন ছাপিয়ে লাল-সবুজ পতাকার প্রশান্তি বিলায়। কিংবা জীবনানন্দের এক-অবিস্মরণীয় ধানসিঁড়ি কোথাও সুদূরপুরের দেহলিতে কুলকুল বেগে বয়ে চলেছে থেকে-থেকে।
কে আমাকে শোনাবে নেকড়েহীন রূপসী বাংলার পবিত্র রূপকথা অবিরল?