উত্তাল জনপদ জুড়ে সমুদ্রের কল্লোল
 প্রশান্ত, আটলান্টিক যেন উঠে এসেছে
 বাংলার ঘরে ঘরে;
 আদিম উন্মত্ততা নিয়ে।
 গৌড়, বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, সমতট, হরিকেল…
 প্রাচীন প্রাণেরা যেন জেগে ওঠে বাংলার বুক জুড়ে।
রূপকথার গল্পের মতো অ, আ, ক, খ
 শৈশবের স্বপ্নের মতো অ, আ, ক, খ
 সোনালী শস্যের ছন্দের মতো অ, আ, ক, খ
 ছোট্ট খুকুর নৃত্যের মতো অ, আ, ক, খ
 মহাকাব্যের ব্যঞ্জনার মতো অ, আ, ক, খ
 সঙ্গীতের মূর্ছনার মতো অ, আ, ক, খ
 জিম্মি হয়ে থাকবে কি
 বাজেয়াপ্ত হবে কি, অস্ত্রের মুখে
বহু বর্ণিল
 হাজার বছরের শ্যামলিমার গন্ধ মাখা অ, আ, ক, খ
 লক্ষ বছরের পলির সৌরভ মাখা অ, আ, ক, খ
 রুদ্ধ হবে কি সহস্রাব্দের সমবায়ী স্বর
দিগন্তজোড়া পূর্ণিমা ঢাকা পড়ে যায়,
 স্বৈরাচারী ব্লাকআউটের কর্কট কৃষ্ণপক্ষে,
 রাক্ষসী অন্ধকারে যেন গ্রাস করতে চায় সকল কিছু।
 উত্তাল কোলাহল রুদ্ধ করে
 সমুদ্রের বুকে সেঁটে দেয় থমথমে নীরবতা।
স্তব্ধ চরাচর,
 চরিদিক নিস্তব্ধ, নির্বাক —
 হঠাৎ ‘শব্দ’
 শিহরিত আঁধার, সে কী রহস্যময়তা!
 দূরে মৃদু আলো দেখা যায়,
 সেই আলোতে ভেসে ওঠে
 অম্লান অ, আ, ক, খ।
আবার নির্জন জনপদ।
 কোথাও দূর থেকে শব্দ ভেসে আসে
 কানে আঘাত হানে তা
 একটি ভাষার দাবি, কয়টি গুলি,
 কয়েকটি তাজা প্রাণ
 রক্তাক্ত অ, আ, ক, খ
 ‘মন’ ও ‘জীবন’ পায় নবজাগরণ।
 সহস্রাব্দের নাড়িতে টান পড়ে
 এক নিমিষেই ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে হাজার বছর।
বয়ে যায় হীম শীতলতা
 হয় তো এ জীবনের উপর দিয়ে,
 তারই মাঝে চোখে ভাসে
 রক্তিম অ, আ, ক, খ — জীবনের পথ-রেখা।
 আমি সে পথে চলি
 মিষ্টি ভাষায় কথা বলি
 লিখন লিখি,
 স্বপন দেখি,
 জীবন আঁকি,
 হাসি, ভাসি, ভালোবাসি।
মা, মাটি, মাতৃভাষা,
 আমার ভালোবাসা।
 আমি ঘুরি এই পৃথিবীর পথে পথে
 আমি কথা কই আমার সাথে
 আমার প্রাণের বাংলায়;
 আর কারো সাথে নয়।
 কারণ, এ যে আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে
 গেঁথে দিয়েছে সেই গুলির আঘাতে।
 আর এ বর্ণমালা
 ধোয়া সে পবিত্র রক্তে,
 হৃদয়-পৃষ্ঠে এমনভাবে মিশে আছে
 শত ভুমিকম্পের, শত ঘুর্ণিঝড়ের, শত মৃত্যুর
 শত সহস্র ধ্বংসলীলাও
 সেখানে নিষ্ক্রিয়
 হয়তো দুএকটি অক্ষরও
 খুঁজে পাওয়া যাবে।
দুধগন্ধা মুখের বুলি অ, আ, ক, খ
 আধো আধো সুরের তুলি অ, আ, ক, খ
 স্নেহ-সিক্ত মাতৃ-মধু অ, আ, ক, খ
 হাজার বছরের মাটির সুধা অ, আ, ক, খ …







 
 


